এআইয়ের কারণে ২০২৬ সালের মধ্যে চাকরি হারাতে পারে যে ৫ পেশা

আমাদের চোখের সামনে ঘটে যাচ্ছে একটি নীরব বিপ্লব। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি দিন দিন আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে। এটি এখন আর শুধু কল্পগল্পের ফ্যান্টাসি নয়, বাস্তবে মানুষের প্রতিদ্বন্দ্বী। এআইয়ের কারণে মানুষ ভবিষ্যতে চাকরি হারাবে কিনা, তা নিয়ে রয়েছে নানা মুনির নানা মত। কেউ কেউ মনে করেন, এআই মানুষের প্রতিদ্বন্দী নয়, বরং সহযোগী হবে। আবার অনেকের মতে, এআই অল্পদিনের মধ্যে এমন জায়গায় পৌঁছে যাবে যে মানুষ চাকরি হারাতে বাধ্য হবে।

এদিকে কিছু বিশেষজ্ঞ বলছেন, ২০২৬ সালের মধ্যে পাঁচটি পেশা এআই দখল করে নেবে। এটা কিন্তু শুধু ভবিষ্যদ্বাণী নয়, ইতিমধ্যে বাস্তব হতে চলেছে। চলুন সেই পেশাগুলো সম্পর্কে জেনে নিই।

১. আইনের মারপ্যাচ এখন রোবটের নখদর্পণে

একসময় চুক্তিপত্র পর্যালোচনার জন্য আইনজীবীরা ঘণ্টায় ৫০-৬০ হাজার টাকা নিতেন। তবে সেই দিন এখন অতীত। এআই এখন মানুষের চেয়ে দ্রুত এবং নির্ভুলভাবে চুক্তিপত্র পর্যালোচনা করতে পারে। হার্ভে এবং ডুনটপের মতো এআই প্ল্যাটফর্মগুলো ইতিমধ্যে এসব কাজে এআই ব্যবহার করছে। তাছাড়া এই ব্যবহার করলে অভিজ্ঞতারও দরকার হয় না।

একজন জুনিয়র আইনজীবী দিনে সর্বোচ্চ ২০টি চুক্তি পর্যালোচনা করতে পারে। কিন্তু এআই একই সময়ে ২ হাজারের বেশি চুক্তি পর্যালোচনা করে ৯৯.৭ শতাংশ নির্ভুলতার সঙ্গে। এই তুলনা দেখলেই বোঝা যায়, এই কতটা বিপ্লব ঘটিয়েছে।

বিশ্বের অন্যতম বড় আইনবিষয়ক সংস্থা লিঙ্কলেটার্স বর্তমানে এআই ব্যবহার করে বাণিজ্যিক চুক্তি পর্যালোচনা। কাজটা করতে এআইয়ের লাগে মাত্র ১ মিনিট। কিন্তু আগে মানুষের এই একই কাজ করতে লাগত ঘণ্টার পর ঘণ্টা। খরচও বেঁচে গেছে অনেক। আগে যে করতে ৫০ হাজার ডলার খরচ হতো, এখন সেই কাজ করা যাছে মাত্র ৫০০ ডলারের।

এই পরিবর্তনের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়বে চুক্তি পর্যালোচনাকারী, প্যারালিগ্যাল গবেষক, নথি বিশ্লেষক এবং আইনি সচিবদের ওপর।

২. হিসাবের খাতা অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়বে মানুষ

আপনার কাজ যদি হয় স্প্রেডশিট বা হিসাব মেলানো, তাহলে ভবিষ্যতে আপনার চাকরি যাওয়ার আশঙ্কা আছে। মাইন্ডব্রিজ এবং অ্যাপজেনের মতো এআই অ্যাকাউন্টিং সফটওয়্যার এখন জালিয়াতি শনাক্ত করতে পারে, বিল প্রসেসিং করতে পারে, এমনকি আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি করতে পারে। আর এসব কাজ করতে পারে যেকোনো মানুষের চেয়ে দ্রুত। তাছাড়া এসব সফটওয়্যারের কফি বিরতি নিতে হয় না। হিসাবেও ভুল করে না বললেই চলে। কাজ করতে পারে টানা ২৪ ঘণ্টা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে টাকা যে বেঁচে যাবে, তা আর বলতে। এমন সুযোগ থাকতে কোম্পানিগুলো কেন এআইয়ের পরিবর্তে মানুষকে চাকরি দেবে বলুন তো!

৩. স্বাস্থ্যসেবার কাজে বিপ্লব

চিকিৎসক এবং নার্সরা চাকরিতে নিরাপদ থাকলেও স্বাস্থ্যসেবার বিশাল প্রশাসনিক কর্মীবাহিনী এআইয়ের কাছে দ্রুত চাকরি হারাবে। মেডিকেল কোডার, ইন্স্যুরেন্স ক্লেইম প্রসেসর, ডেটা এন্ট্রি অপারেটরদের, রোগীর তথ্য প্রবেশ—এসব কাজ এআইয়ের সাহায্যে আরও দ্রুত করা যাবে।

এআইয়ের রোগীদের মন বুঝে ভালো ব্যবহার করার দরকার নেই, শুধু দ্রুত কাজ করতে পারলেই হলো। আর এই কাজটা এআই মানুষের চেয়ে অনেক দ্রুত করতে পারে। অ্যানথেম নামে একটি কোম্পানি এআই ব্যবহার করে বছরে ২০ কোটির বেশি মেডিকেল ক্লেইম প্রসেস করেছে। আগে এই কাজ করতে সপ্তাহ লেগে যেত। এখন করা যাচ্ছে কয়েক মিনিটে। প্রশাসনিক খরচও কমেছে ৩০ শতাংশ।

৪. কল সেন্টারে কথা বলবে যন্ত্র

শিগগিরিই কাস্টমার সার্ভিস প্রতিনিধিরা চাকরি হারাবেন। এআই চ্যাটবট এবং ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্টগুলো এখন মানুষের সহায়তা ছাড়াই ৮০ শতাংশ গ্রাহককে সাহায্য করছে। এগুলো কখনো বিরক্ত হয় না, অসুস্থ হয়ে ছুটি নেয় না এবং হাজার হাজার গ্রাহককে একসঙ্গে সাহায্য করতে পারে। তাই ভবিষ্যতে হয়তো আপনি কল সেন্টারে কল করলে মানুষের পরিবর্তে কোনো যন্ত্রের সঙ্গে কথা বলবেন। সেই যন্ত্র মানুষের চেয়ে জ্ঞানী না হলেও বেশি ধৈর্যশীল হবে।

৫. কলম চলে যেতে পারে এআইয়ের হাতে

কন্টেন্ট তৈরি এবং ডেটা ব্যবস্থাপনার মতো কাজগুলোকে একসময় মানুষের নিজস্ব জগৎ বলে মনে হতো। কিন্তু চ্যাটজিপিটি বা জেমিনির মতো এআই মডেলগুলো সেই ভাবনাকে ভুল প্রমাণ করেছে। মানুষের চেয়ে অনেক দ্রুত এআই কন্টেন্ট তৈরি করে দিতে পারে। তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন তৈরিতেও এআই বেশ পটু।

এআইয়ের কখনো রাইটার্স ব্লক হয় না। প্রতিবেদন তৈরি করতেও লাগে না বাড়তি সময়। ১০ জন মানুষ প্রতিদিন যে প্রতিবেদন বা কন্টেন্ট তৈরি করতে পারে, এই তা করতে পারে কয়েক মিনিট বা ঘণ্টার মধ্যে। মানুষের বেতনের চেয়ে এআইয়ের খরচও অনেক কম। তাই ভবিষ্যতে লেখক, সম্পাদক, সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার, ডেটা এন্ট্রি স্পেশালিস্ট এমনকি বেসিক গ্রাফিক ডিজাইনারদেরও চাকরি হারানোর ঝুঁকি আছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker