শোকজ নোটিশ পাওয়ার পরও কক্সবাজার ঘুরছেন এনসিপি নেতারা

জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠের মতো একটা ঐতিহাসিক দিনে কক্সবাজার ভ্রমণে যাওয়ায় কারণ দর্শানো নোটিশ (শোকজ) দেওয়া হয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শীর্ষ পাঁচ নেতাকে। সেটিকে থোড়াই কেয়ার করে এখনো সাগরের বুকেই দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন তারা।
এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমের ফেসবুক লাইভ থেকে তারই প্রমাণ মিলেছে। যেটি তিনি করেছেন বুধবার (৬ আগস্ট) সন্ধ্যা পৌঁনে সাতটায়। সমুদ্র সৈকতের সামনে দাঁড়িয়ে ওই লাইভটি করেছেন তিনি। পেছনে সূর্য মামা ডুবুডুবু ভাব।
লাইভটিতে সারজিসকে বলতে শোনা যায়, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পূর্ণ হয়েছে গতকাল (মঙ্গলবার), আজ ৬ আগস্ট। আমরা এনসিপির পক্ষ থেকে যে পুরো বাংলাদেশের মানুষের জন্য ২৪ দফার একটি ইশতেহার দিয়েছি, তার মধ্যে ২১ নম্বর যে দফা, জলবায়ু সহনশীলতা এবং নদী ও সমুদ্র রক্ষা।’
সারজিস তার লাইভে সমুদ্র সৈকতের পরিবেশ কীভাবে রক্ষা করা যায় এবং সমুদ্রকে কীভাবে সম্পদে পরিণত করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করেছেন। এই লাইভ দেখে অনেক নেটিজেন তাকে দ্রুত ঢাকায় ফিরে শোকজের জবাব দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
জানা গেছে, শোকজ নোটিশ পাওয়ার পরও ঢাকায় ফেরার তোড়জোড় না করে এনসিপির নেতারা কক্সবাজারে এক হোটেল থেকে অন্য হোটেলে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
এর আগে দলের রাজনৈতিক পর্ষদকে না জানিয়ে কক্সবাজার ভ্রমণে যাওয়ায় বুধবার দুপুরে সারজিস আলমসহ এনসিপির শীর্ষ পাঁচ নেতাকে শোকজ করা হয়। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সশরীরে উপস্থিত হয়ে তাদের সেই নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব (দফতর) সালেহ উদ্দিন সিফাত স্বাক্ষরিত পৃথক পাঁচটি নোটিশ ওই পাঁচ নেতাকে পাঠানো হয়। অন্য চার নেতা হলেন- দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা এবং যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ।
শোকজ নোটিশে বলা হয়, ‘গতকাল ৫ আগস্ট জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তি ও রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ দিবসে আপনি এবং দলের আরও চারজন কেন্দ্রীয় সদস্য ব্যক্তিগত সফরে কক্সবাজার গিয়েছেন। এই সফর সংক্রান্ত কোনো তথ্য কিংবা ব্যাখ্যা ‘রাজনৈতিক পর্ষদ’-এর কাছে পূর্বে অবগত করা হয়নি।’
‘এ অবস্থায়, আপনার এই সিদ্ধান্তের কারণ ও প্রেক্ষাপট সম্পর্কে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এবং সদস্য সচিব আখতার হোসেনের কাছে সশরীরে উপস্থিত হয়ে লিখিত ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য আপনাকে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা যাচ্ছে।’
মঙ্গলবার গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির দিনে কক্সবাজারে ঘুরতে যান এনসিপির আলোচিত ওই পাঁচ নেতা। তারা ঢাকায় নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠক করতে গেছেন বলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়।
এরপর নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী দাবি করেন, কারও সঙ্গে বৈঠক করতে নয়, নিছক একটু ফ্রেশ হতে কক্সবাজারে গিয়েছেন তারা। যে হোটেলে তারা ওঠেন, সেটির চিফ সিকিউরিটি অফিসারও জানান, সেখানে কোনো বিদেশি অতিথি নেই।
তারপরও সমালোচনা থেকে রেহাই পাননি হাসনাত-সারজিসরা। গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির মতো একটা ঐতিহাসিক দিনে ঢাকায় বিশাল আয়োজন ফেলে তাদের কক্সবাজার ভ্রমণ বড়োসড়ো প্রশ্নের মুখে ফেলেছে এনসিপিকে। তারই জেরে দেওয়া হয়েছে শোকজ নোটিশ।