৭০ বছরে এসে ডলি জহুরের চাওয়া—নিখাদ ভালোবাসা
বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী ডলি জহুর পা রেখেছেন জীবনের ৭০তম বছরে। জন্মদিনের সকাল থেকেই ফোনে শুভেচ্ছায় ভেসেছেন তিনি। “সকাল থেকে ফোন ধরেই যাচ্ছি। একজনের পর একজন ফোন করছেন, কত স্মৃতি মনে করিয়ে দিচ্ছেন। এই যে মানুষের ভালোবাসা ও দোয়া পাচ্ছি—নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হয়,”—বললেন তিনি।
১৭ জুলাই ৭০ বছর পূর্ণ করেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এই অভিনেত্রী। সেদিন সকালে তাঁর সঙ্গে কথা হচ্ছিল, তখন বাসার নিচে অপেক্ষমাণ একটি বেসরকারি টেলিভিশনের গাড়ি—তারকা আড্ডার অতিথি হিসেবে সেখানেই যাচ্ছিলেন তিনি। গাড়িতে উঠেও চলতে থাকে স্মৃতিচারণ।
ডলি জহুর জানান, তাঁর জন্ম ঢাকার ভূতের গলিতে। সেখানেই কেটেছে শৈশব-কৈশোর। জন্মদিন মানেই ছিল বাড়িভর্তি রান্নার ঘ্রাণ, ভাই-বোনদের আনন্দ। “মা মুরগি জবাই দিতেন, পায়েস হতো। দুধওয়ালার থেকে বাড়তি দুধ রাখা হতো,” বললেন তিনি।
পড়ালেখার শুরু ঢাকাতেই, পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় মঞ্চনাটকে যুক্ত হন। এভাবেই অভিনয়ে প্রবেশ। টেলিভিশন নাটক ও চলচ্চিত্রে নিজের অভিনয় দক্ষতায় হয়ে ওঠেন অনন্য। এইসব দিনরাত্রি, অক্টোপাস, সুখের উপমা, আন্তরিক, একদিন হঠাৎ, শেষ পত্র, চুপি চুপি, ক্ষণিকালয়—এসব নাটকে তাঁর অভিনয় প্রশংসিত হয়েছে। নব্বইয়ের দশকে চলচ্চিত্রে মা চরিত্রে ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী।
চলচ্চিত্রে কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন দুটি জাতীয় পুরস্কার ও ২০২১ সালে আজীবন সম্মাননা। তবে এখন আর আগের মতো কাজ করেন না। “একই ধরনের গল্প আর একঘেয়ে চরিত্রে কাজ করতে ভালো লাগে না,” বলেন তিনি।
অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসকারী একমাত্র ছেলের সঙ্গে মাঝেমধ্যে দেখা হয়। তবে প্রবাসে মন টেকে না ডলি জহুরের। “এখানকার খোলা আকাশ, পরিচিত মুখ, মানুষের চাওয়া-পাওয়া—সবকিছুতেই শান্তি পাই। ওখানে গেলে নিজেকে গণ্ডিবদ্ধ মনে হয়,”—বললেন তিনি।
তবে দেশের মানুষ নিয়েও তাঁর মিশ্র অনুভূতি। আগের মতো নিখাদ ভালোবাসা এখন আর পান না বলে আক্ষেপ জানালেন। “মানুষ এখন অনেক নিষ্ঠুর হয়ে গেছে। মায়া-মানবিকতা কমে যাচ্ছে। সবাই কেবল নিজের সুখে ব্যস্ত। পাশের মানুষটাকেও আপনজন ভাবতে পারে না,”—বললেন তিনি।
জীবনের এই পর্যায়ে এসে ডলি জহুরের একটাই চাওয়া—
“ভালোবাসাটুকু যেন সত্যি হয়, নিখাদ হয়। সেটুকুই চাওয়া।”