রাজনৈতিক পরিবর্তন না হলে ব্যাংকে কোনো নীতিই কাজ করবে না

ব্যাংক খাতের তদারকি বাড়াতে উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ কার্যক্রম ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। তবে রাজনৈতিক গুণগত পরিবর্তন না হলে কোনো নীতিমালায়ই ব্যাংক খাত শক্তিশালী করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। গতকাল সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে পুরো বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। সিদ্ধান্ত হয়েছে, দেশের সব তফসিলি ব্যাংকে পর্যায়ক্রমে এই তদারকি কাঠামো বাস্তবায়ন করা হবে।

গভর্নর বলেন, ‘এরই মধ্যে ২০ ব্যাংকের সঙ্গে পাইলটিং কার্যক্রম শেষ হয়েছে‌। আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ৬১ ব্যাংকেই রিস্ক বেইসড সুপারভিশন চালু হবে।

১২টি ভাগে বিভক্ত ১২টি কমিটি গঠন করা হবে, যারা ব্যাংকের চতুর্দিক থেকে অর্থাৎ ৩৬০ ডিগ্রি সুপারভিশন করবে। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে যাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাজে হস্তক্ষেপ না করা হয়। সংস্থাটাকে নিজের মতো চলতে দেওয়া হয়।’

ব্যাংক মার্জার নিয়ে গভর্নর বলেন, ‘আমরা ছয়টি ব্যাংকের সঙ্গেই আলাদা আলাদা আবারও বৈঠক করব। যদি তারা সংগত কারণ দেখাতে পারে তাহলে মার্জ হবে না। আমাদের জানামতে ছয়টি ব্যাংকই ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। সে জন্য তাদের মার্জের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

দুর্দশাগ্রস্ত ব্যাংকের বোর্ড পুনর্গঠন সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘বোর্ড পুনর্গঠনের পর কিছু ব্যাংক খুবই ভালো করছে। তবে যারা পারফরম্যান্স দেখাতে পারছে না প্রয়োজনে এসব ব্যাংকের বোর্ড আবার পুনর্গঠন করা হবে।

এরইমধ্যে আমরা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠি দিয়েছি কেন তাদের বন্ধ করা হবে না তার উত্তর দেওয়ার জন্য। তারা যদি যৌক্তিক কারণ দেখাতে পারে এবং সরকারসম্মত হয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও কোনো কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে না বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে আমার ধারণা, কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানও বন্ধ করতে হবে। শুধু ডলারভিত্তিক রিজার্ভ ব্যবস্থা থেকে পরিবর্তন এনে পণ্য মুদ্রা বা অন্য সম্পদ সঞ্চয় করা যায় কি না, সে বিষয়েও ভাবছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, ঝুঁকিনির্ভর তদারকি কাঠামোর আওতায় প্রতিটি ব্যাংকের আর্থিক, বাজার, পরিচালনাগত, আইনগত ও কৌশলগত ঝুঁকি চিহ্নিত করা হবে আরো নিখুঁতভাবে। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। এতে প্রতিটি ব্যাংকের কার্যক্রম আলাদাভাবে মূল্যায়ন করা এবং ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোতে দ্রুত হস্তক্ষেপ করা সম্ভব হবে।

এই কাঠামো চালুর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক তার অভ্যন্তরীণ সংগঠনে বড় ধরনের রদবদল আনছে। নতুন করে গঠন করা হবে একাধিক তদারকি বিভাগ। এর মধ্যে থাকবে তদারকি নীতিমালা ও সমন্বয় বিভাগ, তথ্য বিশ্লেষণ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগ, প্রযুক্তি ও ডিজিটাল ব্যাংকিং তদারকি বিভাগ এবং অর্থপাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ সংক্রান্ত ঝুঁকি তদারকি বিভাগ। প্রতিটি ব্যাংকের জন্য নির্ধারিত থাকবে পৃথক তদারকি টিম।

ব্যাংকের পরিচালকদের নিয়ে প্রশ্ন করলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, ব্যাংক কম্পানি আইন সংশোধনের মাধ্যমে ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের সংখ্যায় পরিবর্তন আনা হবে। তিনি বলেন, অন্তত ৫০ শতাংশ স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ বাধ্যতামূলক করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, পাশাপাশি একই পরিবারের সদস্যসংখ্যা কমতে পারে। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একটি প্যানেল গঠন করবে। প্যানেলের বাইরে থেকে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ করতে চাইলে তাঁর যথেষ্ট যোগ্যতা থাকতে হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker