গোপনে শিশুর ক্ষতি করছে যেসব খাবার

শিশুর ভবিষ্যৎ গঠনে খাদ্যাভ্যাস একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সঠিক পুষ্টি না শুধু তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে সহায়ক, বরং ভবিষ্যতে নানা রোগের ঝুঁকি কমাতেও কার্যকর। তাই সন্তানকে পুষ্টিকর খাবার দিতে বাবা-মায়েরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন। তবে সব খাবার কি আদৌ নিরাপদ? অনেক সময় যে খাবারগুলো স্বাস্থ্যকর মনে হয়—রঙিন প্যাকেজিং, চটকদার বিজ্ঞাপন আর পরিচিত ব্র্যান্ডের আড়ালে—সেগুলোর কিছু শিশুদের জন্য হতে পারে মারাত্মক ক্ষতির কারণ। অজান্তেই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ঢুকে পড়া এমন পাঁচটি সাধারণ খাবার রয়েছে, যা নিঃশব্দে শিশুর স্বাস্থ্যের ওপর ফেলছে নেতিবাচক প্রভাব। নিচে সে তালিকাই তুলে ধরা হলো।ব্রেকফাস্ট সিরিয়াল এবং পানীয়
হ্যাঁ, ব্রেকফাস্ট সিরিয়াল সুবিধাজনক, বিশেষ করে যদি আপনার সবকিছু রুটিন অনুযায়ী থাকে। কিন্তু সেই সুবিধা কি আপনার সন্তানের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো? উজ্জ্বল রঙের এবং মিষ্টি সিরিয়াল ভালোর চেয়ে বেশি ক্ষতি করছে। কিছু সিরিয়ালে মিষ্টির চেয়ে বেশি চিনি থাকে, যা ওজন বৃদ্ধি এবং শক্তি কমাতে কাজ করে। এতে মেশানো রঙ অন্ত্রের স্বাস্থ্যকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে। অন্যদিকে, চিনিযুক্ত পানীয় খালি ক্যালোরি ছাড়া আর কিছুই নয়। কোল্ড ড্রিংকস এবং কৃত্রিম মিষ্টির কোনো পুষ্টিকর উপকারিতা নেই।

স্বাদযুক্ত দই
দই আজ নতুনভাবে পরিচিত হয়ে উঠেছে। প্রোটিনের পরিমাণের কারণে স্বাস্থ্যকর হিসাবে বাজারজাত করা স্বাদযুক্ত দই শিশুর জন্য স্বাস্থ্যকর নয়। কারণ এতে চিনি এবং কৃত্রিম রঙ মেশানো থাকে। বাবা-মায়েরা এই দইকে স্বাস্থ্যকর ভেবে তাদের শিশুকে বেশি বেশি খেতে দেন। শিশুদের অতিরিক্ত চিনি গ্রহণ স্থূলতা, টাইপ ২ ডায়াবেটিস এবং দাঁতের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। চিনিযুক্ত দইয়ের বদলে টক দই বেছে নিন। মিষ্টি স্বাদ যোগ করতে মধু এবং বেরি মিশিয়ে খেতে দিতে পারেন।

মাইক্রোওয়েভ পপকর্ন
আমরা সবাই পপকর্ন পছন্দ করি। শিশুরাও পপকর্ন খেতে পছন্দ করে। তবে দোকান থেকে কেনা এই পপকর্ন শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাতে এমন পদার্থ থাকে যা শরীরের ওপর বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। অনেক ব্র্যান্ডের ব্যাগের আস্তরণে পলিফ্লুরোঅ্যালকাইল পদার্থ (PFAS) থাকে, যা ফরেভার কেমিক্যাল নামেও পরিচিত। গবেষণায় PFAS-কে বিকাশগত সমস্যা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ক্ষতির সঙ্গে সম্পর্কিত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তাই শিশুকে বাড়িতে চুলায় তৈরি পপকর্ন খেতে দিন।

প্রক্রিয়াজাত মাংস
প্রক্রিয়াজাত মাংস প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য স্বাস্থ্যকর নয়, শিশুদের ক্ষেত্রে তো কথাই নেই। হট ডগ, ডেলি মিট এবং সসেজ অনেক শিশুরই টিফিনের প্রধান খাবার। কিন্তু এগুলো সোডিয়াম, নাইট্রেট এবং প্রিজারভেটিভের মতো অ্যাডিটিভ সমৃদ্ধ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) প্রক্রিয়াজাত মাংসকে গ্রুপ ১ কার্সিনোজেন হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করেছে। এই প্রক্রিয়াজাত মাংস নিয়মিত খেলে তা কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। উচ্চ সোডিয়ামের মাত্রা শিশুদের রক্তচাপ নিয়েও উদ্বেগ বাড়ায়।ডিপ ফ্রাই খাবার
শিশুরা ভাজা সব জিনিসই পছন্দ করে। তবে এধরনের খাবার তাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। এই ভাজা খাবারে ট্রান্স ফ্যাট থাকে, যা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়, এমনকী শিশুদের ক্ষেত্রেও। ভাজা খাবারে ক্যালোরি বেশি থাকে এবং এর পুষ্টিগুণ কম। এছাড়াও দোকান থেকে কেনা চিকেন নাগেট, ফ্রাই এবং এই জাতীয় রান্নার জন্য প্রস্তুত অন্যান্য স্ন্যাকসে অ্যাডিটিভ থাকে। শিশু যদি ভাজা খাবার পছন্দ করে তাহলে তাজা উপাদান দিয়ে বেকিং বা এয়ার-ফ্রাই করার চেষ্টা করুন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker