সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে শিক্ষায় দুই মহাপরিচালককে!

নিজেস্ব প্রতিবেদক: সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে শিক্ষা প্রশাসনে শীর্ষ দুই দপ্তরের মহাপরিচালককে। গত রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) ড. এহতেসাম উল হক ও জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমির (নায়েম) মহাপরিচালক পদে ড. জুলফিকার হায়দারকে পদায়নের পর থেকেই তাদের বিরুদ্ধে বিগত সরকারের সঙ্গে সখ্য থাকার বিস্তর অভিযোগ আসছিল। বিতর্ক এড়াতে তাদের সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার।

তাদের পদায়নের পর গত রোববার সাদিক আব্দুল্লাহর ঘনিষ্ঠকে মাউশির ডিজি, সমন্বয়ক-নাগরিক কমিটির সঙ্গে শিক্ষা সচিবের তুঘলকি কাণ্ড প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এরপর তাদের বিষয়ে খোঁজখবর নিতে শুরু করে মন্ত্রণালয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, মাউশি ও নায়েমের  মহাপরিচালক পদায়নের পর থেকেই নানা বিষয় সামনে আসছে। বিশেষ করে মাউশির মহাপরিচালক শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই ও বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর আস্থাভাজন জানাজানির পর বির্তক ওঠে। জুলাই আন্দোলনের সময় ছাত্রদের মুভমেন্ট ও তথ্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দিতেন। এ সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত মন্ত্রণালয়ের হাতে আসার পর তাকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব সিদ্দিক জোবায়ের হাতে রক্ষা করতে শেষ চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে।

অন্যদিকে নায়েমের ডিজি পতিত সরকারের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা এবং বিতর্কিত কারিকুলাম বাস্তবায়নের মাস্টারমাইন্ড হওয়ায় তাকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

তবে এ বিষয়ের মন্ত্রণালয়ের শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ ও সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের দপ্তরে ও ফোনে পাওয়া যায়নি।

জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের যুগ্ম সচিব (কলেজ) মো. নুরুজ্জামান বলেন, তাদের নানা বিষয় আমাদের নজরে এসেছে। এগুলো নিয়ে কাজ করছি।

তাদের সরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মাউশির ডিজি অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ এহতেশামুল হক বলেন, আমি পুরো চাকরি জীবনের কোনো সুবিধা নেইনি। বিগত সরকারের তো প্রশ্নই আসে না। আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হচ্ছে সেগুলো এক ধরনের ষড়যন্ত্র। আমার কাছ থেকে যারা সুবিধা নিতে পারেননি, তারাই এ ধরনের অভিযোগ করছেন।

জানা গেছে, তাদের পদায়নে ক্ষুব্ধ হয়ে রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়েরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাদের অর্ডার বাতিলের দাবি জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও নাগরিক কমিটির সদস্যরা। এ সময় সচিবের সঙ্গে তাদের বাগবিতণ্ডা হয়। উত্তেজিত হয়ে চুক্তিভিত্তিতে আসা সচিব বলেন, ‘এমন হলে আমি চলে যাব’।

সচিব জানান, এ দুইজনের আদেশ হওয়ার আগে দুই কর্মকর্তার কর্মজীবন ও ব্যক্তিগত তথ্য, অ্যাকাডেমিক ফলাফল সংগ্রহ করে ফাইল তোলা হয়। এরপর উপদেষ্টার সম্মতির পাওয়ার পর দুটি গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে তাদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। সেখানে তারা আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী ছিলেন এমন কোনো তথ্য আসেনি।

সচিব তাদের আরও জানান, এখানে আমি সাচিবিক দায়িত্ব পালন করেছি। কোনো তথ্যে যদি গ্যাপ থাকে সেটি উপদেষ্টাকে জানানো হবে। তিনিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন। তিনি চাইলে তাদের অর্ডার বাতিল করতে পারেন।

এরপর সমন্বয়কদের একজন বলেন, মাউশির নতুন ডিজি ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পক্ষে গুণগান গেয়েছেন। স্বৈরাচারী হাসিনার ফুফাতো ভাই বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর অনুগত ছিলেন। জুলাই আন্দোলনের সময় ছাত্রদের মুভমেন্ট ও তথ্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দিতেন। এ সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সচিবের হাতে তুলে দেন সমন্বয়করা।

তারা বলেন, এমন ব্যক্তিকে মাউশির ডিজি করা মানে ছাত্রদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি। তাকে দ্রুত সময়ের মধ্যে অপসারণ করতে হবে। তখন সচিব বলেন, পুরো বিষয়টি আমি উপদেষ্টাকে জানাব। তিনিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।

এ সময় একজন সমন্বয়ক বলেন, আপনি (সচিব) হয়েছেন ছাত্রদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে। অথচ আপনি সাবেক বিদ্যুৎ জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নজরুল হামিদ বিপুর হাতে ধরে যুগ্মসচিব, অতিরিক্ত সচিব হয়েছেন। সেই অভিযোগ আমরা করতে চাই না। কিন্তু আপনার হাত ধরে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন হলে এটা ছাত্ররা মেনে নেবে না। এ সময় সচিব উত্তেজিত হয়ে বলেন, আমাকে এসবের ভয় দেখাবেন না। আমি আছি বলেই এখনও কিছু ভালো পদায়ন হচ্ছে। অন্যথায় অনেক কিছু এখানে ঘটত।

পদায়ন ও যোগদানে সর্বোচ্চ গোপনীয়তা

রোববার আলাদা প্রজ্ঞাপনে দুইজন মহাপরিচালককে পদায়ন করা হয়। এ দুজনের নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ গোপনীয়তা রক্ষা করে মন্ত্রণালয়। ৩০ জানুয়ারি প্রজ্ঞাপন হলেও মাউশির ডিজির প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয় রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টার পর। তার আগেই তাকে মন্ত্রণালয়ে যোগদান করান সচিব। সকাল ১০টায় সচিবের রুমে যোগদান করেন নতুন মহাপরিচালক ড. এহতেসাম উল হক। সচিবের কাছে যোগদানের পর মন্ত্রণালয়ের ডেস্ক অফিসার উপসচিব (সরকারি কলেজ-২) মো. মাহবুব আলম মাউশির কর্মকর্তাকে ফোন করে জানান, নতুন মহাপরিচালক হিসেবে অমুক যোগদান করেছেন। তিনি একটু পর মাউশিতে আসবেন। তার জন্য সবধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করুন। এটা শোনার পর মাউশির কর্মকর্তা দৌড়াঝাপ শুরু করেন। ততক্ষণ পর্যন্ত জানেন না, কে নতুন ডিজি হিসেবে পদায়ন পেয়েছেন। দপ্তরের আসার পর তারা জানতে পারেন তিনি পটুয়াখালী সরকারি কলেজের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker