বৈশ্বিক গড় ছাড়িয়ে গেল বাংলাদেশের মানুষের আয়ু

বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু এখন বৈশ্বিক গড়কে ছাড়িয়ে গেছে। জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) প্রকাশিত ‘বিশ্ব জনসংখ্যা পরিস্থিতি (এসডব্লিউওপি) ২০২৫’ শীর্ষক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই তথ্য। মঙ্গলবার (৮ জুলাই) রাজধানীর গুলশানে জাতিসংঘ ভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ইউএনএফপিএ বাংলাদেশের প্রতিনিধি ক্যাথরিন ব্রিন কামকং আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বে পুরুষদের গড় আয়ু যেখানে ৭১ বছর, সেখানে বাংলাদেশি পুরুষেরা গড়ে ৭৪ বছর বেঁচে থাকেন। নারীদের বৈশ্বিক গড় আয়ু ৭৬ বছর হলেও বাংলাদেশে নারীদের গড় আয়ু ৭৭ বছর।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের বর্তমান জনসংখ্যা ১৭ কোটি ৫৭ লাখ, যার অর্ধেকই নারী। দেশের দুই-তৃতীয়াংশ জনগণ, অর্থাৎ প্রায় ১১ কোটি ৫০ লাখ মানুষ কর্মক্ষম বয়সসীমা (১৫-৬৪ বছর) এর মধ্যে রয়েছেন। মোট জনসংখ্যার ১৯ শতাংশ কিশোর-কিশোরী, যার সংখ্যা প্রায় ৩ কোটি ৩০ লাখ। এছাড়া ১০ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণ-তরুণীর সংখ্যা প্রায় ৫ কোটি, যা দেশের জনসংখ্যার ২৮ শতাংশ। এই বৃহৎ যুব জনগোষ্ঠী বাংলাদেশকে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের সুফল কাজে লাগানোর বড় সুযোগ এনে দিয়েছে। তবে একই সঙ্গে দেশের বয়স্ক জনগণের সংখ্যাও বাড়ছে। বর্তমানে ৬৫ বছরের বেশি বয়সী মানুষের সংখ্যা ৭ শতাংশ, যা প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ—এটি দেশের বার্ধক্যজনিত চ্যালেঞ্জের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

ইউএনএফপিএর প্রতিনিধি ক্যাথরিন ব্রিন কামকং বলেন, ‘আসল সংকট জন্মহার নিয়ে নয়, বরং সংকটটি হলো প্রজননস্বাস্থ্যের বিষয়ে মানুষের, বিশেষ করে নারী ও তরুণদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতার অভাব।’

তার ভাষ্য, বাংলাদেশে মোট প্রজনন হার (টিএফআর) ২ দশমিক ১ হলেও নানা সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পদ্ধতিগত বাধার কারণে মানুষ তাদের ইচ্ছানুযায়ী সন্তান নিতে পারছে না।

তিনি বলেন, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, স্বাস্থ্যসেবার উচ্চ ব্যয় এবং শিশুদের যত্নের পর্যাপ্ত সুবিধার অভাবে অনেক পরিবার সন্তান নেওয়া থেকে বিরত থাকছে বা দেরিতে সন্তান নিচ্ছে। এ ছাড়া সামাজিক রীতি, বৈষম্য এবং মেয়েদের ওপর কম বয়সে বিয়ে ও মা হওয়ার চাপ তাদের স্বাধীন সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাধা তৈরি করছে। নারীদের ওপর অবৈতনিক গৃহকর্মের বাড়তি চাপ, লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বড় চ্যালেঞ্জগুলিও প্রজননস্বাস্থ্য বিষয়ে নারীদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের পথকে আরও জটিল করে তুলছে।

প্রতিবেদনে এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—স্বাস্থ্য খাতে জিডিপির ০ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে বরাদ্দ বাড়িয়ে ৫ শতাংশে এবং জাতীয় বাজেটের ১৫ শতাংশে উন্নীত করা, মাতৃস্বাস্থ্য সেবার উন্নতি, পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতির সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা এবং দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মী ধরে রাখা।

এ ছাড়া সমন্বিত যৌনশিক্ষা, সাশ্রয়ী আবাসন, সবেতন মাতৃত্বকালীন ও পিতৃত্বকালীন ছুটি এবং নারীর অবৈতনিক কাজের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়ার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। ইউএনএফপিএ মনে করে, এই পদক্ষেপগুলো বাংলাদেশের ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট কাজে লাগানোর প্রচেষ্টার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

অনুষ্ঠানে ইউএনএফপিএর ডেমোগ্রাফিক ডেটা অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রধান মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম বলেন, দেশে ৬৫ বছরের বেশি বয়সী মানুষের হার ৭ শতাংশে পৌঁছেছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে শ্রমশক্তি সংকুচিত হওয়া এবং বয়স্কদের যত্ন ও সামাজিক সুরক্ষার ব্যয় বেড়ে যাওয়ার মতো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে দেশ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker